Categories


যখন বৃষ্টি নামল

মনের মধ্যে যথেষ্ট উদ্বেগ নিয়েই অমলা হেডমিসট্রেসের ঘরে ঢুকেছিল। উদ্বেগটা অকারণ নয়। প্রধান শিক্ষয়িত্রী সুরূপা সেনের অনেক কোয়ালিফিকেশন। দুঃখের বিষয় অমায়িকতা তার মধ্যে পড়ে না। মিস সেন পিওর ম্যাথম্যাটিকস নিয়ে এম.এ. পাস করেছেন। অক্সফোর্ডে টীচার্স ট্রেনিং-এ পেয়েছেন ফাস্ট ক্লাস। ক্লাসে পড়ান চমৎকার। স্কুলের অ্যাডমিনিস্ট্রেশন চালান নিখুত। কিন্তু তার । মেজাজটা সেই যে সংস্কৃত কাব্যের ভাষায় বলে কুসুমপেলব তার কাছ ঘেষে যায় না। ছাত্রী, টীচার, কেরানী, পিওন সবাই তঁার ভয়ে সন্ত্রস্ত। স্কুলের প্রেসিডেন্ট, সেক্রেটারী মায় ম্যানেজিং কমিটিও তাকে সহজে ঘটাতে চান না।


কত অজানারে

ঘটনাচক্রে ওল্ড পােস্ট আপিস স্ট্রীটের আদালতি কর্মক্ষেত্রে আমাকেও একদিন এমনি অসংখ্য অপরিচিত চরিত্রের সাক্ষাৎ সংস্পর্শে আসতে হয়েছিল। সেদিন অচেনাকে চেনা আর অজানাকে জানাই ছিল আমার জীবিকার অপরিহার্য অঙ্গ। তারপর এতদিন পরে হঠাৎ একদিন টের পেলাম কখন যেন আমার আকাশও বর্ণাঢ্য হয়ে উঠেছে তাদের রঙে। কখন যেন নিজেরই অজ্ঞাতসারে তাদের আমি ভালাে বেসে ফেলেছি মনে মনে। জানি, আইনের সঙ্গে সাহিত্যের সম্পর্কটা বিশেষ মধুর নয়। অন্ততঃ সাহিত্যের কমলবনে আইনের কলরব ঠিক ভ্রমর গুঞ্জনের মতাে শােনায় না। কিন্তু এই গ্রন্থে আমি আইনকে দেখিনি। ওল্ড পোেস্ট আপিস স্ট্রীটের যে মানুষদের একদিন ভালােবেসেছিলাম তাদেরই আজ অক্ষরে আবদ্ধ করবার চেষ্টা করেছি মাত্র, আর কিছু নয়।


কাকে বলে নাট্যকলা

আমাদের আজকের আলােচ্য বিষয় হল নাট্যকলা সম্পর্কে। সাহিত্য, চিত্র, নৃত্য, সঙ্গীত এই সমস্ত যেমন কলা হিসাবে স্বীকৃত, সেইরকম নাট্যকলাও কলা হিসাবে স্বীকৃত। কিন্তু এর মধ্যে একটা গােলযােগও আছে। একটা তফাতও আছে। তফাতটা এইরকম যে, ধরুন সাহিত্যকার, কিংবা একজন চিত্রকর বা একজন গায়ক যখন সৃষ্টি করেন তখন তিনি সােজাসুজি তাঁর পাঠক বা দর্শক বা শ্রোতা—তাঁদের জন্যই করেন। এবং সােজাসুজি তাঁদের কাছে পৌঁছেও দেন।


খনামিহিরের ঢিপি

ভারী ভারী পর্দাগুলােকে টেনে টেনে জানলা ছায়, কাচ ছায় ঈশা ঘরে ঘরে ঘুরে ঘুরে। হালকা হলুদের ওপর এক বর্ণচ্ছায় গাঢ় হলুদ মােটিফ বসানাে চমৎকার পর্দা সব বিপন্ন হয়ে পড়েছে। কেননা এ তাে রৌদ্রশােষক রং নয় একেবারেই। ঘন সবুজ, গাঢ় মেরুন কি খয়েরি ছিল ঠিকঠাক রং। কিন্তু রুচির সঙ্গে প্রয়ােজনের প্রায়ই মতে মেলে না। সাত হাজার টাকার পর্দা কিনে শেষ শীতে মুখ আলাে করে ফিরেছিল দম্পতি। হালকা চন্দন দেওয়াল। তাতে হলুদ পর্দার আভা সিলিং পর্যন্ত ছড়িয়ে গেছে। কী সুন্দর! এখন রােদের তাপের সঙ্গে নিজের তাপ যােগ করে, ফেরত পাঠাচ্ছে সেই শখের পর্দা।


বাংলা বাঙালি বাংলাদেশ

হিন্দু ধর্মের ঈশ্বরের মতােই বাঙালির আড্ডা নিরাকার এবং সাকার। একই সঙ্গে স্পষ্ট এবং রহস্যময়। বাঙালি জীবনের সঙ্গে কোথায় যেন এর শেকড়টি ছড়িয়ে আছে অনেক দূর পর্যন্ত। যদিও হালফিলের টি ভি আর ভি সি আর-এর দৌরাত্ম্য বাড়ির বিখ্যাত আড্ডাগুলিতে প্রায় ছেদ টেনে দিয়েছে। অত সময় নেই—এ যুক্তিতে চায়ের দোকান বা রকের আড্ডা স্তিমিত প্রায়। কারণ বেশির ভাগ চায়ের দোকানে। যে প্রভাতী খবরের কাগজ ও ডবল হাফ চা নিয়ে আড্ডা বসত, তার গুরুত্ব অনেকটা কমিয়ে দিয়েছে টেলিভিশনের খবর পাঠ। আর ষাট-সত্তরের চায়ের দোকানে দোকানে রাজনৈতিক আলােচনায় যে উত্তাপ ও উত্তেজনা ছিল, তার অনেকটাই এখন নিছকই স্মৃতি মাত্র।


নিবেদিতা রিসার্চ ল্যাবরেটারি

নিজের চুরুটটা ধরিয়ে নিয়ে জীমূতবাহন এবারর বেশ জাঁকিয়ে বসলেন। অনেকদিন পরে যেন সময়বয়সী এক বন্ধুর সঙ্গে আড্ডা মারার সুযােগ পেয়েছেন। চুরুটটা হাতে নিয়ে ঠোঁটটা মুছে ফেলে বললেন, “মেয়েমানুষ বলা থেকে খারাপ গালাগালি তখন ছিল না—আমরা ভয়ে ভয়ে তাই চুরুট চচা আরম্ভ করেছিলুম। নিতান্ত পয়সা না থাকলে বিডি খেতাম।”